পর্ব ১ - রুট কি? কেন রুট করবেন? ? রুট করলে সুবিধা ও অসুবিধা কি?

বর্তমানে এন্ড্রয়েডের ব্যবহার প্রচুর বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা এন্ড্রয়েডের খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠেছি। এর মধ্যে রুটিং, কাস্টম রম, ফ্রেমওয়ার্ক, পোর্টিং এ কথাগুলো প্রায় শুনে থাকবেন। যেহেতু জিনিসগুলো অনেক প্যাঁচ এবং ছোট খাটো লেখায় বুঝতে অসুবিধা হয় তাই আমি সব একসাথে না বলে আলাদা আলাদা ভাবে তুলে ধরবো। আমরা আজকে রুট এবং এর সাথে সম্পর্কিত সব তথ্য জানার চেষ্টা করবো, ধৈয্য রাখা সত্যি বাঞ্ছনীয় এবং কিছু না বুঝলে অবশ্যই জিজ্ঞেস করে জানার চেষ্টা করবেন।

  • তো, প্রথম কথা হল রুট (Root) কি?

রুট প্রথমে ব্যবহ্রত হয় লিনাক্সে। আপনারা হয়ত জানেন যে এন্ড্রয়েড হল একটি মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম এবং এটি লিনাক্সের উপর বেইস করে চলে । অর্থাৎ লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমকে মোবাইলে/স্মার্টফোনে চলার উপযোগী করে বানানো হয় যাকে আমরা এন্ড্রয়েড বলে চিনি এবং এই কাজটি করে গুগল (তাই গুগলের আন্ডারে এন্ড্রয়েড ভার্সনের আপডেট বের হয়, যেহেতু তারাই এটা ডেভেলপ করে)। এখন লিনাক্সে রুট মানে হল এডমিনিস্ট্রেটর টাইপ কিছু, এই এক্সেস থাকলে আপনি সিস্টেমের যে কোন পরিবর্তন/পরিবর্ধন/পরিমার্জন করার পারমিশন পাবেন। যেহেতু এন্ড্রয়েড লিনাক্সের আন্ডাবাচ্চা, সেহেতু কাহিনী একই, আর  আপনি যদি রুট এক্সেস পান তাইলে আপনি সিস্টেমের(মানে অপারেটিং সিস্টেমের কোর ফাইলগুলা সহ)যে কোন পরিবর্তন করতে পারবেন। তারমানে আমরা শিখলাম যে রুট মানে অফিসের বস টাইপ কিছু যার পাওয়ার সবার চেয়ে বেশি এবং এই পাওয়ার দিয়ে আমরা নিজের মত করে ফোনকে চালাবো, ফোন যেমন বলে আমরা তেমন চলবো না!

  • Root করা বা Rooting মানে কি?

আগে বললাম সিস্টেম ফাইল এক্সেস করার পারমিশন পাওয়া, এখন প্রত্যেক ম্যানুফ্যাচারার সিস্টেম পাথ গুলো Read-Only করে দেয় যাতে আপনি ঢুকতে না পারেন(এটা একচুয়ালি সিকিউরিটির জন্য করা হয়, আপনি ভুলভাল গুতাগুতি করে সিস্টেমের কোন ফাইল ডিলিট করে দিলে মোবাইল এর পরের বার অন ই হবে না)। আর রুটিং মানে এই সিস্টেম পাথের এক্সেস ফিরে পাওয়া। মানে Read-Write মুড করতে দেয়া। অনেকটা এইভাবে বললে মনে থাকবে-

-বৎস, তুমি কি স্বজ্ঞানে সিস্টেম এক্সেস পেতে চাও? পরে প্যাচালে পরলে আমার দোষ নাই!

-“জ্বি , কবুল কবুল কবুল।

  • রুট করে লাভ কি? এমনেই তো ভালো আছি !

রুট ছাড়া আপনি ভালো থাকলে কোন সমস্যা নাই। সমস্যা হল আমরা সন্তুষ্ট না, আজিব, আমার মোবাইল আমি যেমন ইচ্ছা তেমন করুম! “Access Denied” বলার তুমি কে হে?
রুট ফিচারিং অনেক এপ্লিকেশন আছে যেগুলো অনেক উপকারী, আবার সেগুলো রুট ছাড়া লে না! যেমনঃ এন্ড্রয়েডে ইন্টারনেট ইউজ এক বিরাট সমস্যা, রাতে অন রেখে সকালে উঠলে ৫০ এমবি গায়েব, নিজে নিজে সব আপডেট হয়ে যায়! তো DroidWall এমন একটি এপ যা দিয়ে আপনি অন্য এপ গুলোর নেট ইউজ রেস্ট্রিক্টেড করে দিতে পারবেন, আপনি যদি শুধু অপেরা মিনি,ইউসি ব্রাউজার চালান তাইলে শুধু এগুলোতে টিক মার্ক দিবেন, বাকি যত এপ আছে কেউ আর নেট এর ও ছুঁইয়ে দেখতে পারবে না! এবং অনেক হাজার হাজার এপ আছে যেগুলো ব্যবহার না করলে আপনার জীবন ষোল আনায় মিছে।
আপনি চাচ্ছেন মোবাইলের লুকটাই পাল্টে ফেলতে, স্ট্যাটাস বার, নেভিগেশন বার, সিস্টেম উইজার ইন্টারফেস সহ সব! আগে রুট করে আসেন। 

মাত্র গেল এপ্লিকেশনের কথা, মনে করেন আপনার মোবাইলের ম্যানুফ্যাচারার (say HTC) আপনার ফোনে 2.3.6 এর বেশি এন্ড্রয়েভ ভার্সনের আপডেট দিচ্ছে না। এখন HTC কেন দিচ্ছে না সেটা নিয়ে বালিশ ভিজাবেন নাকি নিজে কোন পথ খুঁজবেন? জ্বি, এন্ড্রয়েড ভার্সন আপডেট করা যায় কাস্টম রম(এইটা কি পরে বলতেসি) ইন্সটল করে, যার জন্য প্রথম প্রয়োজন Root!আশা করি এবার ব্যাপারটা বুঝা গেসে।কিভাবে, সেটা আস্তে আস্তে পড়লে ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
  • মোবাইল কেন রুট করে দেয় না ?

রুট যদি ইম্পরট্যান্ট হয় তাইলে ম্যানুফ্যাচারার-রা কেন রুট করে দেয় না? আবার কেন বলে যে রুট করলে ওয়ারেন্টি দিবে না আর, হু?
আনরুটেড থাকা মানে আপনি সিস্টেমে টাচও করেন নাই, তাই সফটওয়ার ম্যালফাংশন হয়ে পরে না, হলেও আপনার দোষ না, প্রোডাক্ট ছাড়ার সময় যে ফোন ফ্ল্যাশ করিছে তার দোষ। রুট এক্সেস দেয় না কারণ এটা একচুয়ালি সিকিউরিটির জন্য। আপনি ভুলভাল গুতাগুতি করে সিস্টেমের কোন ফাইল ডিলিট করে দিলে মোবাইল বুট হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ফাইল খুঁজে পাবে না আর অন হবে না। আর রুট করতে পারা মানে আপনার সিস্টেম ফাইল সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা আছে, বুঝেন যে এগুলা ডিলিট হলে আপনার ফোন অন কবে না, তাই নিশ্চয় আপনি তখন আর কিছু ডিলিট করবেন না।
রুট করে ফেলার পর তো আপনি সিস্টেম ফাইল গুলো নিয়ে রান্নাবাটি খেলতে পারেন, সনির এপ ওয়ালনে দিতে পারেন, সিম্ফোনির অ্যাপ স্যামস্যাং এ দিতে পারেন। তো এর পরের জগাখিচুড়ি যদি অন না হয় এর দায় কেন ম্যানুফ্যাচারার নিবে? রুট করে সিস্টেমের দায়িত্ব নিছেন আপনি তাই অন না হলে দায়িত্ব আপনার।

আজিব, ভয় কেন লাগান, অন হবে না ক্যান?
রুট করার পর একটা কাজ করতে হয় যার নাম কাস্টম রিকভারি ইন্সটল করা। (নাম শুনে থাকবেন, CWM, TWRP) তো রুট করার পরই এগুলো ইন্সটল করে আপনার পুরো সিস্টেমের একটা ব্যাকআপ নেয়া হয়(যাকে বলে স্টম রম ব্যাক আপ)। এখন আপনি কোন ভুল করার ফলে যদি ফোন বুটলুপ (ফোন বারবার অন অফ হতে থাকা) এ পরেন তাইলে রিকভারি মেনুতে গিয়ে ব্যাক আপ নেয়া সিস্টেম টা রিস্টোর করে নিতে পারবেন। যেহেতু আগের সিস্টেম ব্যাকআপে কোন ভুল ছিল না তাই সেটা ইন্সটল করলে ফোন অন হবেই!
  • কাস্টম রম কি ?
আমাদের মোবাইলে একটা চিপসেট থাকে (MEDIATEK, QUALCOMM) যেটা অনেক মোবাইলের একই হয়। মনে করেন, আপনার দুইটা সেটের নাম WALTON PRIMO H2MICROMAX CANVAS HD এবং দুটিই চলে MEDIATEK চিপসেট দিয়ে। কিন্তু ওয়াল্টন বলিছে WALTON PRIMO H2 তে 4.2.1 পর্যন্ত আপডেট দিবে , এরপরে আর দিবে না। কিন্তু মাইক্রোম্যাক্স কইছে MICROMAX CANVAS HD 4.4 এর আপডেট দিব (ধরে নেন, দিবে বলে মনে হয় না)। এখন যেহেতু দুই সেটের চিপসেট একই সেহেতু Canvas HD এর রম কিন্তু H2 তে ব্যবহার করা সম্ভব। Canvas HD এর রম H2 তে চলার উপযোগী করে তোলার উপায়কে Rom Porting বলে। এবং এই ধরনের রম কে বলা হয় কাস্টম রম। আশা করি বুঝছেন কিভাবে কাস্টম রমের মাধ্যমে এন্ড্রয়েড ভার্সন আপডেট করা যায়।
কাস্টম রিকভারীঃ মানে ফোন অন না হলে না বুটলুপে পড়লে পাওয়ার বাটন এবং ভলিউম আপ/ডাউন বাটন চেপে ধরলে একটা মেনু আসে যার না রিকভারি মেনু। এটাতে ফোনের সিস্টেম অন না করেই ঢুকা যায়। এখন কাস্টম রিকভারি মানে এই জায়গায় নতুন একটা রিকভারি ইন্সটল করে দেয়া যেগুলোতে সিস্টেম ব্যাক আপ রিস্টোর করা সহ বিভিন্ন সুবিধা থাকে। এর সাহায্যে আপনি ভুলভাল কিছু করেও ফোন ঠিক করে ফেলতে পারবেন। আরো অনেক অনেক কাজ আছে কাস্টম রিকভারির।
  • রুট করার সুবিধা কি ?
বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে মোবাইলের অব্যবহৃত ফাইল, টেমপোরারি ফাইল ইত্যাদি নিয়মিত মুছে ফোনের গতি ঠিক রাখা। এছাড়াও মোবাইলের পারফরমেন্স বাড়ানো যায় আরও অনেক ভাবে। ওভারক্লকিং করে সিপিইউ স্পিড স্বাভাবিক অবস্থায় যতটা থাকে তারচেয়ে বেশি দ্রুত কাজ করে। এর মাধ্যমে কোনো বিশেষ কাজে প্রসেসরের গতি বাড়ানোর প্রয়োজন পড়লে তা করা যায়। যখন মোবাইল এমনিতেই পড়ে থাকে, তখন সিপিইউ যেন অযথা কাজ না করে যে জন্য এর কাজের ক্ষমতা কমিয়ে আনা যায় আন্ডারক্লকিং করে। এতে করে ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়ানো সম্ভব। এছাড়াও রুট করে কাস্টম রম ইন্সটল করার সুবিধা রয়েছে। অনেক ডেভেলপার বিভিন্ন জনপ্রিয় মোবাইলের জন্য কাস্টম রম তৈরি করে থাকেন। এসব রম ইন্সটল করে আপনি আপনার মোবাইলকে সম্পূর্ণ নতুন একটি সেটের রূপ দিতে পারবেন। আপনি সফটওয়্যার ব্যবহার করে আপনার রাম এর স্পীড বাড়াতে পারবেন , প্রসেসরের স্পীড বাড়াতে পারবেন তবে কোন হার্ডওয়্যার বা অন্যান্য কোন কিছু বাড়াতে পারবেন না। আপনি ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরাকে ১৬ মেগাপিক্সেল করতে পারবেন না। যেই মোবাইলে NFC নেই তাতে তা সংযোগ করতে পারবেন না। রুট শুধু মাত্র আপনার অভ্যন্তরীণ পারফরম্যান্সে কাজে আসবে , বাহ্যিক কোন পরিবর্তন নয় ।
  • রুট করার অসুবিধা কি ?
সর্ব প্রথম মোবাইল রুট করার মাধ্যমে আপনার ওয়ারেন্টি বাতিল হয়ে যাবে। তাই রুট করার আগে সাবধান। অবশ্য অনেক মোবাইল আবার আনরুট করা যায়। আর মোবাইল আনরুট করা হলে তা সার্ভিস সেন্টারে থাকা টেকনিশিয়ানরা অনেক সময়ই ধরতে পারেন না যে সেটটি রুট করা হয়েছিল কি না। তবে কাস্টম রম থাকলে ধরা খাওয়া বাধ্যতামূলক। অনেকে মোবাইল ব্রিক নিয়ে অনেক কথাই বলেছে। এখন কথা হল ব্রিক মানে কি? ব্রিক অর্থ ইট। আর ফোন ব্রিক মানে আপনার ডিভাইসকে ইটে রূপান্তরিত করা বা নষ্ট হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ আপনার মোবাইল কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। রুট করা ও এর পরবর্তী বিভিন্ন কাজের সময় যদি কোন ভুল ত্রুটি হয় তাহলে ফোনে স্থায়ী বা অস্থায়ী সমস্যা হতে পারে। প্রস্তুতকারক কোম্পানি ফোনটি আনরুট অবস্থায় দেন যাতে আপনার মোবাইলের কোন ক্ষতি না হয়। রুট করার মাধ্যমে আপনি সেই নিশ্চয়তা ভেঙ্গে ফেলেছেন। এখন এর সম্পূর্ণ দায়ভার আপনাকে গ্রহন করতে হবে। রুট করলে দেখা যায় অনেক সময় অনেক ক্ষতিকারক প্রোগ্রাম রুট করা ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে। কিন্তু লক থাকা অবস্থায় ব্যবহারকারী নিজেই রুট অ্যাক্সেস পান না, তাই অন্য প্রোগ্রামগুলোর রুট অ্যাক্সেস পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই বললেই চলে।

পরিশেষে যদি কিছু বলতে চাই তাহলে বলব যে কিছু করার আগে ভাল করে জেনে নেওয়া ভাল। রুট আপনি যদি ঠিক মত বুঝে নিতে পারেন তাহলে আপনার কাছে তা খুব এ সহজ আর যদি না পারেন তাহলে তা খুবই কঠিন

আজকে আপনারা জানলেন Root সম্পর্কে ..................... কীভাবে রুট করবেন তা জানতে আমার সাথেই থাকুন ।


আজকে এতটুকু থাক। আশা করি নতুন কিছু শিখলেন।

No comments:

Post a Comment